বুধবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৩

তারা

লিপগ্লসে ফুটে থাকা ঝিকমিক তারা
পোড় খাওয়া ঠোটে তৃষ্ণা জাগায়
যুবকের কামার্ত চোখে আকাঙ্খার
বিদ্যুৎ খেলে যায়...

অতঃপর বালিকার প্রস্থান এবং
নতুন তারাদের খোঁজ।

মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৩

Goldfish

Dear Goldfish,
ইচ্ছে করেই ভুলে যাওয়ার ছলে তুমি আর
তোমার ছোট-খাট ভুলগুলোকে মিস করি।
জানি, মনে মনে চাইতে যেন মনে করিয়ে
দেই লাল টিপ আর বাসন্তী শাড়ীটার কথা।

জানালায় কাঁচপোকাদের ভিড়ে, তোমার
আদুরে মুখটা ছুয়ে দিতে ভীষণ ইচ্ছে হয়।

ইতি
একজন ভুলোমনা

লাল ঘুড়ি

তোমার পাশের ছাদে সময়ে-অসময়ে ঘুড়ি
ওড়াতে আসা দুরন্ত ছেলেটার কথা মনে আছে...

নাটাইয়ের আড়ালে ওর পাগলামী আচমকাই
বেড়ে যেত, তোমায় এক পলক দেখতে পেলে
কে জানে.., হয়ত বেড়ে যেত ওর হৃদস্পন্দনও

একদিন ছাদে আসা বন্ধ করে দিলে তুমি......
শত নিয়নের স্মিত আলোয় তোমার বিদায়ের
সানাই বাজলো গভীর রাত পর্যন্ত

পাড়ার ডানপিটে ছেলেটার দস্যিপনা কোথায়
যেন হারিয়ে গেল, নাটাই-ঘুড়ি পড়ে রইল
ঘরের কোণে নিশ্চুপ নির্ভার

কোন এক দ্বি-প্রহরে একটা লাল ঘুড়ি দেখে
চঞ্চল বালকের কথা মনে পরবে হয়ত,
হয়ত জানতে ইচ্ছে করবে খুব; ওর কথা

রবিবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৩

মায়া

সময়ের অলি-গলি পেরিয়ে বালিকা
এখন পরিপাটি রমনী...

সাংসারিক ব্যাস্ততায় ঝুম বৃষ্টি অথবা
আকাশ ভরা তারা গোনার সময় কই

তারপরও কোন এক অখণ্ড অবসরে
ফেলে আসা সময়ের কিছু অনুভুতি
বালিকার মনে আলো জ্বালে;আবার
নিভে যায়।

যে শহর চোরাবালি

যে শহরটা তোমার আমার যোগফল
সে শহরে তুমি-আমি বহুদুরে....

বউমনি দ্বিতীয়

আমার ভেতর যে তুমির বসত্
সে তুমি চির অম্লান প্রতিটি ক্ষণে
যেখানে তোমায় হারানোর ভয় মরিচিকা
সেখানে চাওয়া এবং পাওয়া কোন কিছুর
তোয়াক্কা না করেই, একে অন্যের সবসময়

বাঁধা

কাঁচের দেয়াল বৃষ্টি ফোটা ছুতে দেয় না
তার জন্য তেষ্টা জাগায়...
জল কনার জলছবি একে যায় ইচ্ছেমত
বাধ্যবাধকতায় ছোঁয়া হয় না...

জীবনের সমীকরণ...

অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য কারো অপেক্ষা...
হঠাৎ করেই তার প্রপ্তি, সেই সাথে জীবনের
পট পরিবর্তন।

অতঃপর কারনে বা অকারনে তার হারিয়ে যাওয়া
এবং অন্য কারো মাঝে তাকে খুঁজে যাওয়া।

সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

কাননবালা

দিনের আলো নিভে এলে কাননবালার
আড়মোড়া ভাঙ্গে
তারপর যত দ্রুত পারা যায়, জড়তা কাটিয়ে
ভেস পাল্টানোর তাড়া
নেশা ধরা সুগন্ধি আর গাঢ় লিপিস্টিকের
আস্তরনে নিজেকে লুকানো
আয়নার প্রতিচ্ছবি সহসাই মুচকি হাসি
দেয় অজান্তে

কানন এই হাসির অর্থ জানে না, তবে এতটুকু জানে
এ যেন আজব এক খেলা......সুখ বিক্রির খেলা......

শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

কাগজের পায়রা

কিছু কাগুজে পায়রার ওড়াউরি পলেস্তা খসে পরা কার্নিশে
নতুন কাগজের..., উহু..; একেবারে চকচকে টাকার গন্ধ,
ঘোরের ভেতর কেমন জানি চনমনে ভাব জাগায় গন্ধটা।

মেয়েটার বিয়ে দিতে হবে, ছেলেটার পড়াশুনা বন্ধ...
টং দোকানটাও মেরামত করা জরুরী, সব সমস্যার
সমাধান হয়ে যাবে এবার।

মন ভরে পায়রাগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে মতি,
যেন সাক্ষাৎ সুখ। আচমকা বিকট একটা শব্দে
পায়রার দল উড়াল দেয়, মতি ব্যাকুল হয়ে উঠে।

মতি মিয়াঁর ঘুম ভাঙ্গে, টাকার পায়রার খোঁজ মেলে
না জগৎ সংসারে, আবার প্রতীক্ষা শুরু হয় মতির,
ঘুমের পৃথিবীর জন্য। 

রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

অপূরণ,অকারন

এ যেন কল্প-কথার নিস্তব্ধ কোন নগরি,
যার সবটুকু জৌলুস চুরি করে তুমি উধাও।
শহরের দেয়াল জুড়ে তোমায় ফিরে পাওয়ার
আকুতি আর তার উপর বিবর্তনের প্রলেপ

আমি জানি, কোন এক অমাবস্যায় নুপুরের
ঝংকারে জলসার সাঁঝবাতি আর জ্বলবেনা
তবে আমি প্রতীক্ষায় থাকব যার অন্ত নেই,
আমি চাইও না... কিছু চাওয়া পরে থাক না
বুকপকেটে, অপূরণ অকারন

মঙ্গলবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৩

বউমনি

তুমি হারিয়ে যাওয়ার কোন নিখোঁজ সংবাদ
বেরুবে না আগামী কালের দৈনিক পত্রিকায়
অথবা কিছুক্ষণ নিরবতা পালন।

সবকিছু আগের মতই থাকবে... ফুটপাত,
বেলুন ওয়ালা, ফুল দোকান; হয়ত ওদের
সাথে দূরত্ব বাড়বে এই যা

বিকেল হলে ব্যাস্ত হওয়া হবে না তোমার
অভিমানী ফোন পেয়ে, তোমার মান ভাঙ্গানোর
পায়তারা অথবা দেরি হওয়ার অজুহাত।

টং দোকানের কেতলিটা উদাস মনে ধোঁয়া
ছেড়ে যায়, আমিও পাল্লা দেই ওর সাথে
আর তোমায় ভালবেসে যাই মনে মনে ।

রবিবার, ২১ জুলাই, ২০১৩

অব্যক্ত অভিব্যক্তি

-মামা চা খাবেন

সূর্য স্নানের কল্যাণে অবস্থা এমনিতেই নাজেহাল অবস্থা,তার উপর চা।

না খাব না 

-মামা খান, দাক্তার আফায় কইছে, গরমে চা খাইলে শইল ঠাণ্ডা হয়।

কি নাম তোর...?

-বল্টু 

বল্টু নামটার অনির অনেক চেনা। শৈশবের স্মৃতি বলতে এই নামটাই মনে আছে। 
বস্তির এক দাদি তার এই নাম দিয়েছিল। একদিন দাদীর জ্বর হল, তারপর চলে 
গেলেন না ফেরার দেশে। তারপর কিভাবে জানি এক এতিম খানায় জায়গা হয়।
সেখানে আব্দুস সাত্তার স্যার ধর্ম ক্লাস নিতেন, তিনি বললেন বল্টু কোন নাম হল।,
আজ থেকে তোর নাম আব্দুল মতিন। কোন এক নিঃসন্তান দম্পতির ঘর আলো 
করে এতিম খানাকে বিদায় বলা হয়, খুব সম্ভবত তখন ৩য় শ্রেণীতে পরত মতিন।
ব্যাপারগুলো আবছা মনে পরে। বিশাল অট্টালিকা এসে মতিনের নাম শেষ বারের
মত পরিবর্তন হয়। ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ নাম, অনিকেত চৌধুরী। 

অতীতের এ বিষয়গুলোর কোনটাই তনুজা জানে না। তাকে কথাগুলো বলা দরকার
কারন ওর সাথে অনির বিয়ের কথা চলছে। অনি যদিও জানেনা তনু বিষয়টা কিভাবে
নেবে, তারপরও আজ সে তার মনের কথাটা বলবে। তবে বেশীর ভাগ মনের কথাই
গোপন কথা হয় আর গোপন কথা নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করে। 

বল্টু একটু দূরে এক যুগলকে চা খাওয়ার উপকারিতা বলছে, চা খাওয়ার
ফাঁকে একটু মুচকি হাসি, হবে হয়তো কোন হাস্যকর গোপন কথা।  

মঙ্গলবার, ৯ জুলাই, ২০১৩

ঘোর

হিম শীতল অ্যালকোহলের গ্লাসে
জমে থাকা বিষাদের আমরণ অনশন।

আলো-আঁধারের ঘোর চক্রান্ত, নেশার
মাত্রা বাড়িয়ে দেয় নিজের অজান্তেই।

প্রতিটা চুমুকে শরীরের আদ্যোপান্ত
উষ্ণ অনুভূতির গোল্লাছুট খেলা।

মাতাল অনুভূতি সঙ্গি করে ভাসমান
রাজপথে অনর্থক মৌন মিছিল।

অতঃপর, চির চেনা পথের অচেনা মোড়,
নৈশ প্রহরীর হুঁশিয়ার সংকেত, অবচেতন
মনে গুন গুন, হারিয়ে যাওয়া কোন গান।

ফেরা

তুই থাকলে হয়তো ভাল থাকা না থাকার
এই দর কষাকষি করতে হত না।
উদাস দুপুর, নিঃসঙ্গ বেলকনি সবকিছুর
ইতি টেনে পারি জমাতাম স্বপ্ন রাজ্যে।
সময়ের ফেরে তুই অন্তরের ভেতর সাদা গ্লাডিওলাস
আমি চাতকের ফুটিক জল আওরানো ক্যাঁকটাস

শুক্রবার, ১৪ জুন, ২০১৩

শূন্যতা

শেষ রাতের শূন্যতায় আমি একা নই
দূর থেকে হাতছানি দেয়া টিপ টিপ আলো
জেগে থাকে আমার সাথে।

তোমার কথা ভেবে যাই সঙ্গোপনে, স্মৃতির
অলিগলি ঘুরে ক্লান্তি এলে তুমি এসে ঘাম
মুছে দাও মমতায়।

অতঃপর শেষ সিগারেটে পুড়তে থাকা
নিঃসঙ্গতা, ফুরিয়ে যাওয়া রাত, অন্তহীন ক্লান্তি......
ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যাওয়া।

শুক্রবার, ৭ জুন, ২০১৩

আনমনে

রাতের সাথে পাল্লা দিয়ে আলোর পসরা সাজিয়ে বসা
ল্যাম্পপোস্টের আবছা আলো গাঢ় হতে থাকে।

স্ফুটিক হলদে আলোয় একদল শোষিত নিস্তব্ধতার বিক্ষোভ
মিছিল পানে রাশভারী অট্টালিকার ভাবলেশহীন অভ্যস্ততা।

অনেক দিনের জমানো কিছু আকাঙ্খা বুকপকেটে ঘুমিয়ে পড়ে
আপনমনে, আমি নিশ্চুপ তাকিয়ে থাকি মিছিলটার দিকে।

প্রতিক্ষণ

একদিন এই স্বার্থপর আকাশটা আমার হবে
বারান্দার কোণে সেদিন কাকটাকে আর অপেক্ষা
করতে হবে না আমার জন্য।

খালি পায়ে সদ্য ভেজা শহুরে পথের উষ্ণ শিহরন
শিরদাঁড়া বেয়ে উঠে যাবে, ঝড়ো বাতাসের মতো
ছুটব গন্তব্যহীন।

তুমি অপেক্ষায় থেকো, আমি আসব, না বলা কথার
চিরকুট নিয়ে।

বৃহস্পতিবার, ৩০ মে, ২০১৩

বালিকা

তোমার চলে যাওয়ার পথ ধরে
আমার কষ্টার্জিত স্বপ্নগুলো হেঁটে যায়।

বিষাদ, নিঃসঙ্গতা নামক অনুভূতিগুলো 
নিশ্চুপ অট্টহাসিতে হিংস্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।

ইস... সব কিছুকে মিথ্যে করে দিয়ে 
যদি ব্যাপারটা দুঃস্বপ্ন হত, মন্দ হত না। 

বালিকা..., তুমি ফিরে আসবে জানি, 
কথা দিচ্ছি নিরাশ হবে না সেদিন।

তবে, তোমার সুখগুলো আমার স্বপ্নের দামে
কেনা, যা শুধু আমার, একান্তই আমার।

বুধবার, ২৯ মে, ২০১৩

কূপমণ্ডূক

কে......?
জি...আমি
আমি কে...?
আমি কেউ না
ক্যান নাম নাই...?
এক সময় ছিল
(উত্তরে একটু বেশী বিস্মিত দারোয়ান) 
এত রাতে এইখানে কি...?
(ঘড়িতে সময় রাত ১০:০০, যদিও ফ্যামিলি বাসার জন্য অনেক রাত)
আবার প্রশ্ন... কি.., বললেন না কি চান...?
জি গুন গুন আছে...?
অ্যা... গুন গুন ক্যাডা...??
(গুন গুন আমার দেয়া নাম) 
না মানে... ঋতিকা আছে...?
থাকতে পারে, তয় আপনার নাম না বললে কাম হইব না।
উম....... গিয়ে বলেন কূপমণ্ডূক এসেছে 
কি...?? কি বললেন... কূপ...মন..., ভাই অন্য নাম কন
মুশকিলে পরে গেলাম আবার।

শুক্রবার, ২৪ মে, ২০১৩

ঘুম

দুঃখগুলো পথ হলে ভালই হত,
হেঁটে হেঁটে পাড়ি দিতাম মাইলের পর মাইল।
ক্লান্ত হলে ঘুমিয়ে পড়তাম দূর থেকে
ভেসে আসা হ্যামিলিনের বাঁশিওলার সুরে।   

বৃহস্পতিবার, ২৩ মে, ২০১৩

অদৃষ্ট

হয়তোবা কেউ কখনো জানবেই না, ক্লান্ত বিকেলে ঈশান পানে তাকিয়ে থাকা আবীরের নিস্পলক দুটি চোখ,
তার অসহায়ত্বের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। হয়তোবা কেউ কখনো জানবেই না কঙ্কনের জন্য তার চাওয়া আজও 
এতটুকু ফিকে হয়নি। তবে আর কেউ জানুক আর নাই জানুক অন্তত অভ্র তো জানবে আবীরের নীল কষ্টগুলোর
কথা, কত প্রতীক্ষার প্রহর যে কেটে গেছে অবলীলায় তার কথা নাই বা বললাম।

তবে কষ্টগুলো হয়তো কষ্ট দিতে ভুলে গেছে, হয়তোবা কষ্টগুলোকে আবীর অনেক আপন করে নিয়েছে, তারপরও
কঙ্কনের শূন্যতা মাঝে মাঝে তার অস্তিত্তের জানান দিতে ভোলে না।

হয়তো স্মৃতিগুলোকে বুকে জড়িয়ে এভাবেই কেটে যাবে আবীরের জীবনের বাকী সময়টুকু। হয়তোবা এটাই ছিল
আবীরের অদৃষ্ট, হয়তোবা এরই নাম অপূর্ণতা। 

সোমবার, ২০ মে, ২০১৩

হুতুম প্যাঁচা

তোর চাকচিক্যের ঠুনকো অহমিকা আমার
বয়াম ভরা রোদের কাছে হার মানে। 

না পাওয়ার সুর, রাত জাগা হুতুম প্যাঁচার ডাকে 
তোর দোর গোঁড়ায় পৌঁছে যায় নিয়ম মাফিক।

তোর স্পর্শ কামুক ঠোঁটে নিকোটিনের সামিয়ানা,
পুরে যাওয়া অস্তিত্তের আবসান।

আমি মন্দ নেই, কিছু একাকীত্ব, একরাশ ধোঁয়া 
আর নিঃসঙ্গ আকাশের সঙ্গি হয়ে ভালই আছি আমি।

শুক্রবার, ১৭ মে, ২০১৩

Combination

মনের অন্তঃপুরে জমে থাকা অকটেন, আর তোমার দেয়া
ক্রোধের অনলেন এক অমায়িক Combination এ পূর্ণিমার
চাঁদটা আজ সত্যিই ঝলসানো। যেন কোন কিছু বুঝে উঠার
আগেই সাঁতার না জানা ডাহুক ছানাটার খালের পানিতে পরে যাওয়া।
তারপর চিরচেনা সেইট্র্যাজেডি, মায়ের অসহায়ত্ব, রক্ত... রক্ত...
রক্তে রক্তিম হয়ে যাওয়া ঘোলাটে বাস্তবতা।

বৃহস্পতিবার, ১৬ মে, ২০১৩

আলাপচারিতা

-মামা যাবেন............
 আমি আপনের মামা হইলাম ক্যামনে...?
-হইলে সমস্যা কি...
 সমস্যা আছে
-কি সমস্যা বলেন
 সমস্যা হইলো আমি আপনার মামা না
-তাইলে কি বললে খুশি হবেন
 ভাই বলতে পারেন
-ভাই হইলেন ক্যামনে...?
 মুসলমান ভাই ভাই
-আমি মুসলমান নাও হইতে পারি
 তাইলে রিক্সাওয়ালা বলেন
-আচ্ছা তাই সই.....

বুধবার, ১৫ মে, ২০১৩

যাদুর সহর

ধুলো মাখা-মাখি আর বাস্ততার ছুটি হয় সন্ধ্যা ৬:০০ টায়। 
দিনের আলোয় ক্লান্তি  এলে রোড লাইট গুলো গা ঝারা দেয়,
জন্ম হয় নতুন জগতের।

সবুজের আড়ালে যেখানে আলো-ছায়া কানামাছি খেলে, সেখানেই 

চলে বেচা-কেনা।ঠাকুর বাড়ির সোনার তরী; এ ঘাঁটে স্টপেজ দেয় না,
তবে ভদ্র লোকের আড় চোখের লালসা থমকে দাড়ায় ঠিকই।

কার্য সিদ্ধি হলে গণিকার প্রনয় নীল ধোঁয়া হয়ে উড়ে যায়। আবার শুরু হয়

দর কষাকষি। হাতে-হাত রেখে তেপান্তর পারী দেয়ার প্রতিশ্রুতি, কামনার 
জলে আদ্রতা আসে চাওয়া-পাওয়ায়।

সময়ের টানে রাত-দিনের বাস্ততা চলে অবিরাম। হ্যাচকা টানে দ্রুতই শেষ

হয়ে আসে নিকোটিন। একরাশ ধোঁয়া পেছনে ফেলে পিচঢালা পথে ধাক্কা খায়
আসক্তি। ছোট্ট একটা ফুলকি জ্বলে উঠার চেষ্টায় বার্থ হয়ে মিলিয়ে যায় আধারে।

বউমনি তৃতীয়া



আমি আসব বউমনি........., আমি আসব।
আসব, শুভ্র আকাশের বুকে রক্তিম দাগ কেটে, গগণ বিদারী প্রতিধ্বনি, চিৎকার করে জানান দেবে আমার প্রত্যাবর্তন।

আমি আসব.........।
আসব প্রতিটি নিস্তব্ধতায়, অমলিন জোস্নায়; একাকীত্বে ঘেরা বেলকনিতে, ধোঁয়া উঠা কফির মগে।

আমি আসব, ঝুম বৃষ্টিতে পিচঢালা পথ মাড়িয়ে, তোমার খোলা জানালায় দমকা বাতাস হয়ে।

আমি আসব, মধ্যরাতে হাছনা-হেনার দাপুটে উন্মত্ততায়, শেষ বিকেলে অপরাজিতার নীলে।

আমি আসব, বসন্তের অপরাহ্নে গা এলিয়ে দেয়া শতবর্ষী বৃক্ষ তটে, কোকিলের বাউলা সুরে।

আমি আসব, শিশিরের ললাটে ভাইফোটার আবীর ছোয়ায়, এক চিলতে রোদ্দুরের শান্ত উষ্ণতায়।

আমি আসব......... শান্তি চুক্তি নয়, আপসহীন সহিংসতায়।

অপূর্ণতা

কোন এক মেঘলা দিনে পাগল হাওয়া কানে কানে এসে বলেছিল ভালবাসি। 
ধরণীর সব আহ্লাদ মুঠোবন্দী করে আমি আত্মহারা............

নিঃসঙ্গ পথটা লাম্পপোস্টের মঙ্গল প্রদীপ জ্বেলে আলোকিত, তারপরও কোথায়

যেন গুমোট একটা আঁধার চোরাবালির মতো ঘাপটি মেরে কারো অপেক্ষায়।

নীল ঘুড়িটার ধারালো সুতোয় অনুভূতিগুলো কাটা পরে, ক্রমশ দৃষ্টি সীমার বাহিরে

চলে যায়, শূন্য নাটাই দ্রুত গোছাতে থাকে ফেলে যাওয়া অপূর্ণতা।

স্বপ্নিক

স্বপ্নিক অনুভূতিগুলোর মিট মিট জ্বলতে থাকা আলোর নিচে জোৎনাস্নাত

ইট-পাথরের স্বর্গরাজ্য, ফেরারি সুখগুলোর ঘরে ফেরার আনন্দ।

সবকিছু মিলিয়ে ফুরফুরে মেজাজ... এক কাপ ধোঁয়া উঠা কফি...

আর মিষ্টি রোদের সাথে গোলটেবিল বৈঠক।

নাগরিক

ক্লান্তিহীন হাঁক-ডাকে একসময় যন্ত্রযান ভরে উঠে-
তিক্ততায় জর্জরিত একদল মানুষের অস্তিত্বে।
থেমে থেমে চলা, আনাড়ি চালকের কড়া ব্রেকের ঝাঁকুনি,
ভাবলেশহীন চেহারাগুলোর অস্ফুট স্বরে অভ্যস্ততার ছাপ।

লালবাতি জ্বলে ওঠে, অপেক্ষার পালা থেকে মুক্তি পেতে
চলে নানান যুক্তি-তর্ক, দেখে মনে হয় একে অন্যের কত চেনা।
কড়া গন্ধে চাহুনির মোড় ঘোরে, চোখ যায় রিক্সায় বসা হাস্যজ্জল
তরুণীর দিকে, ওর অর্ধ-নগ্ন বুকের ভাঁজে কামনার লুটোপুটি।

ওদের লালসা হঠাৎ হিংস্রতার রূপ নেয়, আবার পরোক্ষনেই নিভে যায়।
সিগন্যালের সবুজ সংকেতে হেল্পার ব্যাস্ত হয়ে পরে, আবারো ক্লান্তিহীন
সেই ডাক..............., ফারামগেট...... ফারামগেট.......

আড়াল

অতঃপর ভালোবাসার ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়।
টিনের চালে টুপটাপ কানাকানি তোমার কাঁচের
চুরির ঝংকারে ফিকে হয়ে আসে। ভেজা মাটির
গন্ধটা, লাল টুকটুকে বেনারসির আড়ালে মুখ লুকায়।

ঝড়ো বাতাসের অভিমানের সঙ্গী হয়ে আমি হেঁটে যাই নির্জন পথ ধরে

জলছাপ



উপন্যাসের পাতা শেষ হয়, ঘটনার ঘনঘটা চলতে থাকে। “জলছাপ” নামক
এমনি এক লেখার শুরু এক কিশোর ও ঈশিতাকে ঘিরে। না, আর দশটা মেয়ের
মত ঈশিতার দেয়ার মত তেমন কোন পরিচয় নেই, পতিতাদের দেবার মত কোন
পরিচয় থাকে না। লেখাটার শেষ অংশটুকু.........

হয়তো ঈশিতা ভুলেই গিয়েছিল, তার আকাশটা শুধুই মেঘ করতে পারে, সেই মেঘ ঝরে সিক্ততা পাওয়ার আকাঙ্খা; শুধুই চাওয়া, যা বাস্তবতা থেকে দূরে,বহু দূরে উড়ে বেড়ায়, যা কখনই ধরা দেবার নয়।

রাত ফুরালে ক্লান্ত ঈশিতার শরীর জুড়ে নেমে আসে অন্তহীন নিস্তব্ধতা আর দু’চোখে অবসাদ। ফেরার পথে যেখানটায় দেখা হবার কথা ছিল অভির সাথে, কিছুক্ষন দাড়ায় সেখানে। ব্যাপারটাকে পুরনো স্মৃতিটার মাথায় হাত বুলিয়ে সেটাকে জিইয়ে রাখার একতা প্রচেষ্টা বলা চলে।

রাস্তা জুড়ে অগণিত মানুষ, কেউ হাসছে, কেউ কথা বলছে, কেউ ব্যাস্ততার বোঝা নিয়ে ছুটছে তো ছুটছেই। গোঁফওয়ালা ট্র্যাফিকটার মেজাজ আজ একটু বেশিই চড়া। প্রাণহীন শহরে বেঁচে থাকার দর কষাকষি, আসলেই কি এত সুখ, নাকি জলছাপের আড়ালে ঘর পালানো কষ্টগুলোর ঘুমিয়ে থাকার পাঁয়তারা।

ঈশিতা পথ চলতে শুরু করে, কিছু দীর্ঘশ্বাস আর নাগরিক বাস্ততাকে পিছু ফেলে...।

চুরি


আমি জেনে গেছি চন্দ্রালোকের গোপন প্রণয়
বুকের বোতাম খোলা, ভবঘুরে পবনের সাথে।

ঘুমন্ত পৃথিবীর সব সুখ লোপাট করে ওরা সটকে
পরে অজানা কোন অরণ্যের গভীরে।

জোনাকের মিটমিট আলোয় সেই সুখ ভাগাভাগি
করে নেয় দু জন।

নির্ঘুম আমি ছিপ ফেলে বসে থাকি, দুরন্ত কিছু
ঘুম মুঠোবন্দী করার নেশায়।

স্রষ্টা

তোমার সূক্ষ্ম কারচুপিতে আমার
ভালবাসার ঘরে ডাকাত হানা দেয়।

জানি, আড়ালে কলকাঠি নেড়ে
বেজায় খুশি তুমি।

ফিরিয়ে দেয়ার উদার মানসিকতা
তোমার নেই, আমি চাই না।

তুমি স্রষ্টা......,নিষ্ঠুর হতেই পার।